কবিতা : স্বাধীনতার লাল সূর্য
কবি জলিল সরকার
🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩
তখন আমরা মহাখালী গ্রন্থিত সড়কে এসে পড়েছি।
উদ্বিগ্ন চোখে মানুষের সারি হাঁটছে উত্তরের পথ ধরে, আমাদের চোখের সামনে পড়ে আছে স্তূপাকার লাশ
গুলি খাওয়া মানুষের লাশ,
কারো মাথার খুলি উড়ে গেছে, কারো বা হৃদপিন্ড গোলাকার গর্তে পরিণত মেশিনগানের গুলিতে,
পচে ফুলে উঠেছে কিছু লাশ, কারো কারো দু’হাত পিছ মোড়া বাঁধা, উপুর হয়ে পড়ে আছে মাটিতে।
শকুন আর কুকুরে খাবলে খাচ্ছে মৃত শবগুলো,
উঃ কী বীভৎস দৃশ্য!
আমি তাকাতেই পারছিনা। কতটা হিস্র হলেই মানুষ মানুষকে এভাবেই হত্যা করে,
বুকের ভিতর জ্বলন্ত আগুনের মতো জ্বলছে জিঘৎসার অনল।
বুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা লাশের সারি।
মাথা উপর দিয়ে সোঁ সোঁ শব্দে উড়ে গেল হানাদার বাহিনীর যুদ্ধ বিমান। আমরা ভয়ে নৌকার পাটাতনের নীচে লুকিয়ে পড়লাম।
সমস্ত গ্রাম জ্বলছে।
যে যার মতো প্রাণ ভয়ে পালাচ্ছে দিকবিদিক।
চারদিকে যুদ্ধ আর যুদ্ধ।
আমরা দুর্বার গতি এগিয়ে চলছি। একের পর এক শত্রু ঘাঁটি দখলের মহোৎসব। আমাদের রক্তে তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন! বুলেটের জবাবে বুলেট,
মেশিনগানের জবাবে মেশিনগান,
মরতে রাজি তবু বাংলার মাটিতে নরঘাতকদের উৎখাতের শপথ আমাদের চোখে মুখে।
আমরা লড়ছি প্রাণপণ। মাথার উপর দিয়ে সাঁই সাঁই বুলেট উড়ে যাচ্ছে। একদিন এক ভয়ানক যুদ্ধে আমাদের কয়েকজন শহীদ হলেন। সেদিন আমার ডান পায়ে গুলি লেগেছিল। যেদিন জ্ঞান পেয়েছি শুনেছি দেশ শত্রুমুক্ত। আমার চোখে তখন আনন্দের অশ্রু।
স্বাধীন দেশ। স্বাধীন লাল সূর্য। মুক্তির আনন্দে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছি আমার পৃথিবী। আমার স্বপ্ন। আমার চেতনার জলছবি।